দণ্ডবিধি পার্ট ২

Submitted by Md Mongur Ali Shikder 
 
  Topic: Legally examine provisions for making differences and example with leading case reference on culpable Homicide and Murder, Hurt and Grievous Hurt, wrongful restraint and wrongful confinement.







ভূমিকা : ‘ল’ অব ক্রাইমস তথা  দন্ডবিধি 1860 অপরাধের ধরণ ও সংজ্ঞায়িত করণ এবং যথাযথ সাজা প্রদানের ক্ষেত্রে শাস্তির পরিমাণ নির্ধারণ করার লক্ষ্যে উক্ত আইন অধ্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অত্র আইনে সর্বমোট 511 টি ধারা রয়েছ,   নিন্মে  টপিকে সংশ্লিষ্ট ধারা সমূহ আলোচনা করা হইল- 










নরহত্যা ও খুন:-

নরহত্যা: এ আইনের 299 ধারায় বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তি যদি মৃত্যু ঘটাবার উদ্দেশ্য নিয়ে  কৃত কোন কাজ  কর্তৃক  মৃত্যু ঘটায় অথবা যে  দৈহি জখম মৃত্যু ঘটাতে পারে তেমন দৈহিক  জখম ঘটাবার উদ্দেশ্য নিয়ে কৃত কোন কাজ সংগঠন কর্তৃক মৃত্যু ঘটায় অথবা যে কাজ মৃত্যু ঘটাতে পারে বলে সে জানে সে কাজ সম্পাদন কর্তৃক মৃত্যু ঘটায় তবে সে ব্যক্তি শাস্তিযোগ্য নরহত্যার দোষে দোষী হবে।

উদাহরণসমূহ:  (১) ক একটি কুপের মুখে আড়াআড়িভাবে বাঁশের কঞ্চি পেতে তার উপরে  ঘাস বিছিয়ে রাখে এই উদ্দেশ্যে যে তাতে মৃত্যু ঘটতে পারে তা জানা সত্ত্বেও তা করে,  চ  শক্ত মাটি মনে করে তার উপর দিয়ে হেঁটে যেতে কুপে পড়ে নিহত হয়  এ অবস্থায় ক শাস্তিযোগ্য নরহত্যা করেছে।

(২) একটি ঝোপের একপাশে ক এবং খ অপর পাশে চ রয়েছে, ক জানে ঝোপের অপর পাশে চ রয়েছে কিন্তু খ জানে না, ক খ কে ঝোপের অপরপাশে গুলি করতে অনুরোধ করে আর  খ গুলি করে  ফলে চ নিহত হয় জানা সত্ত্বেও  গুলি করতে অনুরোধ করে যাতে চ নিহত হয় এ অবস্থায় ক শাস্তিযোগ্য নরহত্যা করেছে।

(৩) ক একটি মুরগি হত্যা করে চুরি করার উদ্দেশ্যে উহার উপর গুলি করে কিন্তু গুলির ফলে ঝোপের অন্যপাশে চ এর মৃত্যু হয়, ক জানত না যে চ ওখানে রয়েছে এবং জ্ঞাতসারে মৃত্যু সংগঠন করে নাই যদিও বেআইনি কাজটি করতে ছিল তথাপি সে নরহত্যা দোষের দোষী নয়।
ব্যাখ্যা : যে লোকটি অসুস্থতায় ভুগতেছে অথবা অপারগতায় ভুগতেছে সেই লোককে দৈহিক জখমের মাধ্যমে মৃত্যু ত্বরান্বিত করা মৃত্যু  ঘটাবার  অপরাধ হবে।

ব্যাখ্যা : মাতৃগর্ভের শিশু হত্যা করা নরহত্যা নয় তবে শিশুটির দেহের কোন অংশ নিষ্ক্রান্ত করে  মৃত্যু ঘটানো নরহত্যা হিসেবে গণ্য হবে যদিও শিশুটি শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করে নাই বা ভূমিষ্ঠ হয় নাই।

শাস্তিযোগ্য নরহত্যার  দন্ড 304 ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি খুন নহে এরুপ শাস্তিযোগ্য নরহত্যা করে তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা 10 বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

খুন: দন্ডবিধির ধারা 300 বলা হয়েছে, খুনের সর্ব ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নির্দেশ করা হয়েছে সে সকল ক্ষেত্রে ব্যতীত শাস্তিযোগ্য নরহত্যা খুন হবে,
১ম, যদি যে কার্যটি কর্তৃক মৃত্যু অনুষ্ঠিত হয় সেই কার্যটি মৃত্যু সংগঠনের জন্যই করা হয়ে থাকে,

২য়, যদি কার্যটি কোন ব্যক্তি কে এমনভাবে  দৈহিক আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে যে আঘাতের ফলে লোকটির মৃত্যু হতে পারে বলে অপরাধী জানে।

৩য়, যদি কোন ব্যক্তিকে  দৈহিক আঘাত দানের উদ্দেশ্যে কার্যটি করা হয় এবং যদি যে আঘাত দানের অভিসন্ধি করা হয়েছে  সেই আঘাতটি  প্রকৃতির স্বাভাবিক গতিতে মৃত্যু ঘটানোর জন্য যথেষ্ট হয়।

৪র্থ, যদি যে ব্যক্তি কার্যটি অনুষ্ঠান করে সে ব্যক্তি জানে যে কার্যটি এমন  আশুবিপদজনক যে মৃত্যু ঘটবে অথবা এমন আঘাত ঘটতে পারে যার দরুন সে আঘাতের ফলে মৃত্যু ঘটতে পারে এবং মৃত্যু ঘটাবার অথবা আঘাত ঘটাবার অপর কোন ঝুঁকি গ্রহণের অজুহাত ব্যতিরেকে অনুরূপ কার্যকরে।






উদাহরণসমূহ ১। ক চকে নিহত করার উদ্দেশ্যে তার প্রতি গুলিবর্ষণ করে ফল চ এর মৃত্যু হয় এক্ষেত্রে ক খুন করেছ। 

২। ক জানে চ এর এমন একট ব্যধি রয়েছে যে একটি মাত্র আঘাতের ফলে তার মৃত্যু ঘটতে পারে জেনেও তাকে একটি আঘাত করে ফলে চ এর মৃত্যু হয় এক্ষেত্রে ক খুনের অপরাধে অপরাধী হবে কিন্তু যদি ব্যধির কথা জানা না থাকে এবং হত্যার উদ্দেশ্যে আঘাত না করে থাকে এবং সে অবস্থায় এমন একটি আঘাত করে যার ফলে  স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবান মানুষের মৃত্যু না ঘটে তবে উক্ত ব্যক্তি খুনের অপরাধে  দোষী হবে না।

৩।ক উদ্দেশ্যমূলকভাবে চ কে এমন একটি তরবারি কোপ অথবা লাঠির আঘাত দেয় যা স্বাভাবিকভাবে কোন মানুষের মৃত্যু  ঘটাবার জন্য যথেষ্ট ফলে চ এর মৃত্যু হয় এক্ষেত্রে ক খুনের অপরাধে দোষী হবে যদিও মৃত্যু ঘটাতে চায় নাই।

৪। ক কোন অজুহাত ব্যতীত জনতার প্রতি একটি গুলিভর্তি কামান হতে গুলিবর্ষণ করে ফলে একজন নিহত হয,  এ অবস্থায় ক খুনের অপরাধে সাব্যস্ত হবে যদিও কোনো বিশেষ ব্যক্তিকে হত্যা করতে চায় নাই।

ব্যতিক্রম : ১। শাস্তিযোগ্য নরহত্যা খুনের সামিল  হবে না যদি অপরাধী আকস্মিক ও মারাত্মক  প্ররোচনার ফলে আত্মসংযম শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং যে ব্যক্তি প্ররোচনা দান করেছে সেই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায় অথবা ও অপর কোন ব্যক্তির ভুলক্রমে বা দুর্ঘটনাক্রমে মৃত্যু ঘটায়।

শর্ত:  ১। প্ররোচনাটি কোন ব্যক্তিকে হত্যা করার বা কোনো ক্ষতি সাধনের অজুহাত স্বরূপ অপরাধী কর্তিক স্বয়ং প্রার্থিত হতে পারবে ন।

২। প্ররোচনা টি কোন সরকারি কর্মকর্তার আইনসম্মত যথাযথ ক্ষমতার প্রয়োগ ক্ষেত্রে হতে পারবেনা।

ব্যাখ্যা প্ররোচনাটি  আকস্মিক ও মারাত্মক ছিল কিনা এটি একটি ঘটনাগত প্রশ্ন।

ব্যতিক্রম:  ২। শাস্তিযোগ্য নরহত্যা খুনের শামিল হবে না যদি কোন ব্যক্তি সরল মনে তার আত্মরক্ষার অথবা সম্পত্তির রক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার প্রয়োগক্রমে আইনসম্মত  যতটুকু ক্ষমতা  প্রদত্ত তার সীমা অতিক্রম করে এবং যার বিরুদ্ধে সেই অধিকার  প্রয়োগ করে কোনরূপ পূর্ব পরিকল্পনা ব্যতীত অথবা অনুরূপ অধিকার রক্ষার জন্য যতটুকু ক্ষতিসাধন আবশ্যক তদপেক্ষা বেশি ক্ষতির ইচ্ছা ব্যতিরেকে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায়।

ব্যতিক্রম ৩। নরহত্যা খুনের সামিল হবে না যদি  দোষী একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে অথবা সরকারি কর্মচারীর দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে  আইন সংগত উপায় কোন ব্যক্তির মৃত্যু ঘটায় যা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব বলে যথাযথ কর্মসম্পাদন বলে সরল মনে বিশ্বাস করে কোনরূপ দুরভিসন্ধি ব্যতিরেকে।

ব্যতিক্রম ৪। নরহত্যা টি খুনের সামিল হবে না যদি কোন ব্যক্তি আকস্মিকবিবাদের সময় আকস্মিক উত্তেজনার ফলে কোনরূপ পূর্বপরিকল্পনা ব্যতীত অপরাধী সংঘটিত হয় এবং অপরাধী কোন অন্যায় সুযোগ বা নিষ্ঠুরভাবে অস্বাভাবিক কার্য না করে থাকে।

ব্যাখ্যা : আকস্মিক বিবাদ  বা আকস্মিক উত্তেজনার ক্ষেত্রে কে প্রথমে আক্রমণ করেছে সেটাই বিবেচ্য বিষয় নয়।

ব্যতিক্রম ৫। শাস্তিযোগ্য নরহত্যা খুনের সামিল হবে না যদি যে ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে সে ব্যক্তি 18 বছরের উর্ধ্বে হয় এবং স্বীয় সম্মতিক্রমে মৃত্যুর ঝুঁকি গ্রহণ করে বা মৃত্যুবরণ করে।








খুনেরশাস্তি: 302 ধারায় বলা হয়েছে যদি কোন ব্যক্তি কোন কাউকে ফোন করে তাহলে উক্ত ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হবে অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবে  তদুপরি অর্থদণ্ডে দন্ডিত হবে।










আঘাত ও গুরুতর আঘাত :-

আঘাত: আঘাত দন্ডবিধি 319 ধারায় বলা হয়েছে কোন ব্যক্তি যদি অপর কোন ব্যক্তির দৈহিক যন্ত্রণা, ব্যাধি বা অপারগতা ঘটায় তবে উক্ত ব্যক্তি  দৈহিক আঘাত  করেছে বলে পরিগণিত হবে।

স্বেচ্ছাকৃত আঘাতের শাস্তি : এই আইনের 334 ধারা ব্যতিক্রম সাপেক্ষে কোন ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দান করে তাহলে এক বছরের সশ্রম বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।








গুরুতর আঘাত: এই আইনের 320 ধারায় বলা হয়েছে শুধুমাত্র নিম্নলিখিত আঘাত গুলোকেই গুরুতর আঘাত বলে পরিগণিত করা যায়-

১ম পুরুষত্বহীন করা

২য় যেকোনো চোখের জ্যোতি বা দৃষ্টিশক্তি চিরতরে নষ্ট করা

৩য় যেকোনো কর্ণের শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট করা

৪র্থ যে কোন অঙ্গ বা গ্রন্থির ক্ষতিসাধন

৫ম যে কোন অঙ্গ বা গ্রন্থির শক্তিসমূহের চিরতরে ধ্বংস বা  খর্ব করা  করা

৬ষ্ঠ মাথা বা মুখমন্ডলের স্থায়ীভাবে বিকৃতকরণ
৭ম কোন অস্থির বা দন্ত স্থানচ্যুত করণ

৮ম এমন দৈহিক যন্ত্রণা যা জীবন  সংশয় করে অথবা 20 দিন পর্যন্ত দৈহিক প্রচন্ড যন্ত্রণা ভোগ করতে হয় বা সাধারণ কর্ম থেকে বিরত থাকতে হয়।

গুরুতর আঘাতের শাস্তি: এই আইনের 326 ধারা তে বলা হয়েছে এই আইনে 335 ধারার ব্যতিক্রম সাপেক্ষে কোন ব্যক্তি যদি কাউকে গুরুতর আঘাত করে মারাত্মক অস্ত্র দ্বারা  বা কোন মাধ্যমে তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা 10 বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড তদুপরি অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।











অবৈধ বাধা ও অবৈধ অবরোধ:-

অবৈধ বাধা: 339 ধারায় বলা হয়েছে যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তি কে ইচ্ছাপূর্বক এমনভাবে বাধা দান করে যার ফলে উক্ত ব্যক্তি  যে দিকে যাবার কথা সেদিকের পথ রুদ্ধ করে তবে উক্ত ব্যক্তিকে অবৈধ বাধা দান করেছে বলে পরিগণিত হবে।




ব্যতিক্রম : যদি কোন ব্যক্তি আইনসম্মত ক্ষমতাবলে সরল মনে বিশ্বাসবশত বেসরকারি কোন পথে চলাচলে বাধা দান করে তবে অত্র ধারায় অপরাধ হবেনা।
অবৈধ বাধা দানের শাস্তি এ আইনে 341 ধারায় বলা হয়েছে কেউঅবৈধ বাধা দান করলে এক মাসের কারাদণ্ড 500 টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।






অবৈধ অবরোধ: দন্ডবিধির 340 ধারায় বলা হয়েছে  যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তির চলাচলে এমন অবৈধ নিয়ন্ত্রণ আরোপ  করে যে, উক্ত ব্যক্তি নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করতে পারে না তবে সে অবৈধ অবরোধ করেছে বলে পরিগণিত হবে।

উদাহরণ ক চ কে একটি দেয়াল ঘেরা জায়গাতে যেতে বাধ্য করে এবং সেখানে চ কে  একটি ঘরের মধ্যে নির্দিষ্ট সীমায়  আটকে রাখে ক এই  ধারায় অবৈধ অবরোধ করেছ।
অবৈধ অপরাধের শাস্তি এই আইনের 342 ধারায় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে অবৈধ অবরোধ করলে এক বছর কারাদণ্ড  অথবা এক হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।










উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে ল অফ ক্রাইমস তথা দন্ডবিধি অপরাধ দমনে এবং অপরাধীদের শাস্তি প্রদানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যা আইনে বর্ণিত যথাযথ শাস্তি প্রদানে উক্ত সাবজেক্ট অধ্যায়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।


মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

If any doubt please let me know

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন

দেওয়ানীকার্যবিধি পার্ট ২